‘অদৃশ্য শত্রু’ ভিন্ন স্বাদের গল্প। এর সময় বেছে নেওয়া হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক কাল। সে সময়কার কলকাতার পরিবেশ রচনায় লেখক কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু তার কল্পতা কোথাও বাস্তবকে ছাড়িয়ে যায়নি। পাত্রপাত্রী নির্বাচনে এবং খুনের উপকরণ সংগ্রহে তিনি যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কাহিনীর মধ্যে এনেছেন, ফলে কাহিনীটিকে কোথাও অবাস্তব বলে মনে হয় না। এ গল্পে কিরীটী রায়ের আবির্ভাব অনেক পরে। কিরীটী রায় পাঠকের কাছে যে কত প্রিয় তা এ গল্প পাঠেই বােঝা যায়। তার আবির্ভাবের জন্য পাঠককে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়, কেননা তার কাছে পাঠকের অনেক প্রত্যাশা। শেষ পর্যন্ত নিরাশ হতে হয় না, আমাদের সব প্রত্যাশাই মিটিয়ে দেয়। উৎকণ্ঠা (suspense) সৃষ্টি করা এবং শেষ পর্যন্ত। তা রক্ষা করা—এ দুটিই নীহারবাবুর সহজ আয়ত্তাধীন। নীহারবাবুর কাহিনীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল তিনি অকারণে কাহিনীকে পল্লবিত করেন না। প্রতিটি ঘটনা কাহিনীর অনিবার্য ধারায় সংঘটিত হয় এবং প্রতিটি চরিত্র কাহিনীর অপরিহার্য অঙ্গ। তার বৈজ্ঞানিক উপায়ে প্রতিটি ঘটনার বিশ্লেষণ পূর্বাপর কৌতূহল রক্ষা করে কাহিনীগুলােকে উপাদেয় করে তুলছে। এক নিঃশ্বাসে দৃঢ়পিনব্ধ কাহিনীর শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছুতে কিছুমাত্র বেগ পেতে হয় না। ‘প্রজাপতি রঙ’ শ্বাসরুদ্ধকারী অপরাধ-কাহিনী। ওয়াগন ব্রেকারে’র দলকে ধরতে এসে সত্যসন্ধানী কিরীটী রায় কি ভাবে কতকগুলাে নিষ্ঠুর হত্যার রহস্য উদঘাটন করল এই কাহিনীটিতে তারই রােমাঞ্চকর বিবরণ শুনতে পাওয়া যায়। কাহিনীটি কেবল অপরাধ আর অপরাধীদের নিয়েই লেখা গল্প নয়, তার মধ্যে দুই বােন মাধবী আর সাবিত্রীর দুটি সরস চরিত্র আছে। একই বাড়ির মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে বাইরের কোন মিল নেই